সস্তায় ডলারের খোঁজে বাংলাদেশ

সস্তায় ডলারের খোঁজে নেমেছে সরকার। বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি পূরণে এখন বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে যাচ্ছে। সুদের হার, শর্ত—এসব ছাপিয়ে এখন যেকোনো উপায়ে ডলার চায় সরকার।

বাড়তি আমদানি খরচ মেটানো ও ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল করে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ধরে রাখতেই এই উদ্যোগ।

এ জন্য গত তিন মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার কাছে ডলারের জন্য গেছে সরকার। এই চারটি বৃহৎ দাতা সংস্থার কাছে অন্তত ৭০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ মোট ৬৬ হাজার কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে এখন দাতাদের কাছ থেকে প্রকল্প–সহায়তার পাশাপাশি বাজেট–সহায়তা পেতেই বেশি আগ্রহী বাংলাদেশ। বাজেট–সহায়তার সুবিধা হলো—এই অর্থ কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করতে হয় না। যেকোনো খাতে এই অর্থ খরচ করতে পারে সরকার। সরকারি হিসাবে নগদ ডলার ঢোকে। তবে বাজেট–সহায়তা দেওয়ার সময় বিভিন্ন খাতে সংস্কারসহ কিছু শর্ত দেয় দাতারা।

সরকার এখন প্রকল্প–সহায়তার অর্থও বাজেট–সহায়তা হিসেবে ছাড় করার চেষ্টা করছে। যেমন কোভিড মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছে একাধিক প্রকল্পে অর্থ নিয়েছে বাংলাদেশ। এখনো পুরো প্রকল্পের টাকা আসেনি। বাকি টাকা বাজেট–সহায়তা হিসেবে পেতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়।

সস্তায় ডলারের খোঁজে বাংলাদেশ

 

কোভিডের ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। ফলে দেশের আমদানি খরচ বেড়ে যায়। আবার গত অর্থবছরে প্রবাসী আয়ও কমেছে। তাই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ৯৫ টাকা হয়। খোলাবাজারে দর ১১৫ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। বাড়তি আমদানি খরচ মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে দেখা দিয়েছে বড় ঘাটতি।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ‘গত অর্থবছরে প্রবাসী আয় কম আসায় এবং আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের বাজারে অস্থিরতা বেড়ে যায়। ডলারের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। তাই ডলার যতটা পারি নেওয়া যায়, ততই ভালো।

যেহেতু আমরা ঋণ পরিশোধের সক্ষমতায় নিরাপদ সীমার মধ্যে আছি, তাই আরও ঋণ নিতে সমস্যা নেই। দেশে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতার কাছে বাজেট–সহায়তা চাওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি একধরনের দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই বাজেট–সহায়তা নেওয়ার এখন চমৎকার সময়। কারণ, দেশজ ঋণের তুলনায় বাজেট–সহায়তার ঋণ সস্তা।

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ পায় বাংলাদেশ। এ বছরের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের কাছে নতুন করে ১০০ কোটি ডলার বাজেট–সহায়তা চেয়ে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থনীতির এই খারাপ সময়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থ চেয়ে এই চিঠি দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাংক এখনো এই বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই এই ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চায় অর্থ মন্ত্রণালয়। এই অর্থ পুরোটা একসঙ্গে পাওয়া যাবে না, চার কিস্তিতে মিলবে।

এর বাইরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি প্যাকেজে আরও ৭০ কোটি ডলারের বাজেট–সহায়তা নিয়ে আলোচনা চলমান আছে। ওই দুটি প্যাকেজ অবশ্য খাতভিত্তিক বাজেট–সহায়তা। এর মধ্যে ৪৫ কোটি ডলার পরিবেশ সুরক্ষা এবং বাকি ২৫ কোটি ডলার কর্মসংস্থানে খরচ করতে হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসের শেষের দিকে এডিবির কাছে ১০০ কোটি ডলার চাওয়া হয়। এডিবি নীতিগতভাবে এই অর্থ দিতে রাজিও হয়। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দর-কষাকষি শুরু হয়। তবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি—এই দুটি খাতে খরচ করার জন্য এই অর্থ দিতে চায় এডিবি। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে এডিবির বোর্ড সভায় এই বাজেট–সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন হতে পারে।

চলমান অর্থনৈতিক চাপ নিরসনে ২৪ জুলাই অর্থ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি দেয় অর্থ বিভাগ। চিঠিতে বর্তমান অর্থনীতিতে যেসব চাপ আছে, তা তুলে ধরা হয়। চিঠিতে বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট–সহায়তা বাবদ অর্থ দরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে চার শ কোটি ডলার পাওয়া নিয়েই শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে। প্রায় এক দশক পর ডলারের জন্য আবার আইএমএফের কাছে যাচ্ছে সরকার।

গত মাসে জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার প্রেসিডেন্ট আকিহিতো তানাকা বাংলাদেশ সফরে আসেন। গত ২৫ জুলাই তাঁর সঙ্গে বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট–সহায়তা চান। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, জাইকার কাছে ৫০ কোটি ডলার চাওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ এবং ডলার–সংকট মোকাবিলায় ‘ডলার আনা’র তাগিদ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে বাজেট–সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এটি লেনদেনের ভারসাম্যে একধরনের স্বস্তি দেবে। রিজার্ভ বাড়ানোর পথ খুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট–সহায়তা পেতে বিভিন্ন খাতে সংস্কার করতে হবে। কী সংস্কার করতে হবে, তা আমাদের জানা। অর্থনীতির প্রয়োজনে এসব সংস্কার দরকারও। দাতাদের শর্তের মাধ্যমে আমাদের স্বার্থেই এসব সংস্কার করিয়ে নেওয়া ভালো।’ তাঁর মতে, রাজস্ব ও আর্থিক খাত, সরকার ব্যয় ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়কাঠামো সংস্কার জরুরি।

বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে বাজেট–সহায়তার নানা ধরনের শর্ত থাকে। তবে সব দাতা প্রায় একই রকম শর্ত দেয়। যেমন আর্থিক খাতের সংস্কার; রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে নতুন নতুন কর্মকৌশল; আইন যুগোপযোগী করা; ভর্তুকি পুনর্বিন্যাস করা; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে প্রকৃত সুবিধাভোগী চিহ্নিত করা, ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

 

হরতালের আগের রাতে পল্টনে মিছিল-অগ্নিসংযোগ, আটক ৪

ঢাকার ২৮ কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে শিশুদের করোনার টিকা

Leave A Reply

Your email address will not be published.