দেশে এক ব্যক্তির শাসন ও এক ব্যক্তির মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ক্ষমতাসীন কর্তৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার মানুষকে কষ্ট–যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি—এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে র্যাবের সাতজন কর্মকর্তার ওপর (মার্কিন) নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই; কারণ, তারাই সেসবের নির্দেশদাতা।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিএনপির ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটি’ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ফখরুল প্রধান অতিথি ছিলেন।
১৫ বছর ধরে সারা দেশের মানুষ কষ্ট, হতাশা ও ভয়ংকর ত্রাসের মধ্যে বাস করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জে আহত একজন যুবদল কর্মী শাওন গত পরশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শহীদ হয়েছে। ২৫ থেকে ২৬ বছরের একটি যুবকের ছোট্ট বাচ্চা, মা–বাবা সবাইকে বাঁচিয়ে রাখতে অটোরিকশা চালাত। আন্দোলনের কর্মসূচিতে সবার সঙ্গে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিতে আহত হয়, পরে হাসপাতালে মারা যায়। পুরো জাতি আজ মহাসংকটে পড়েছে।
স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হয়েছে। কিন্তু কী হতভাগ্য জাতি আমরা, যে জিনিসগুলো নিয়ে আমরা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই একই জিনিস নিয়ে এখনো আমাদের লড়াই করতে হয়! এখনো প্রাণ দিতে হচ্ছে, রাজপথে নামতে হচ্ছে এবং চিৎকার করতে হচ্ছে অধিকারের দাবিতে। সেই অধিকারটা হলো জনগণ হিসেবে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরত চাই, যাতে আমরা এক দিন ভোট দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারি। আমরা সেই বাংলাদেশকে ফেরত চাই, যে বাংলাদেশ হবে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতন্ত্রের, মুক্ত সমাজের ও সবার অধিকারের।’
র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার সহস্রাধিক মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে, আমাদের ৬০০ মানুষ গুম হয়ে গেছেন, শত শত মানুষকে থানায় নিয়ে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অত্যন্ত এলিট একটা বাহিনী র্যাব, যারা অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে দেশে সুনাম কুড়িয়েছিল, বর্তমান সরকারের অন্যায় আদেশ পালন করতে গিয়ে তাদের ওপর আজকে নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। র্যাবের সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা পড়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই; কারণ, তারাই নির্দেশদাতা। তাদের ওপরই সবার আগে নিষেধাজ্ঞা আসা প্রয়োজন। যদিও জনগণ ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে। মানুষ বলে দিয়েছে যে তোমাদের আর দরকার নেই।’
একটা দলের ৩৫ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ভুগতে হয়, তাহলে গণতন্ত্র ফাংশন করবে কী করে
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। এমন কেউ নেই যে ১০ থেকে ১৫ বা ২০টা মামলা নেই। মুন্সিগঞ্জে পুলিশ যে গুলি করল, সেখানে বিএনপির ১ হাজার ৭৫০ জনকে মামলা দিয়েছে। একটা উদার গণতান্ত্রিক দলের ৩৫ লাখ মানুষকে যদি মিথ্যা মামলায় ভুগতে হয়, তাহলে সেখানে গণতন্ত্র ফাংশন করবে কী করে? বলা হচ্ছে, গণতন্ত্র আছে এবং সংবিধান অনুযায়ী সবকিছু চলছে। সংবিধান তো তোমরাই আগে খেয়ে ফেলেছো। আজকে নতুন কায়দা ও ছদ্মবেশ নিয়ে আরেকবার একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছ। তারা গণমাধ্যমকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে এখন সাহস করে কেউ সত্য কথাটা বলতে পারে না। এই দেশে ভয়াবহ গণতন্ত্র হরণকারীরা যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তখন লজ্জা-ধিক্কার ছাড়া কিছু আসে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৪ বছর যারা সরকারে, তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে নিজেদের স্বার্থে নতুন করে রচনার অপচেষ্টা করছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে না। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু সত্যিকার ইতিহাস কেউ মুছে দিতে পারে না। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আমরা বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন কমিটি করেছিলাম। সারা বছরের জন্য কর্মসূচি নিলেও করোনার কারণে অনেক কার্যক্রম করা যায়নি। তবু যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। রচনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত লেখাগুলোকে এক করে একটি বই প্রকাশের আশা করছি।’
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম। রচনা প্রতিযোগিতায় উন্মুক্ত, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এ তিন ক্যাটাগরিতে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপস্থিত বিএনপি নেতারা।