‘সারা জনম সিল মেরে ভোট দিলাম, কাগজে মার্কা দেখে সিল মারলাম। শেষ জীবনে কাচের ওপর ছবি দেখে টিপ দিলাম। ভালোই লাগল। এখন ভোট জায়গামতো পড়লি হয়।’
প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন ৮১ বছর বয়সের জাহেদা বেগম। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় লাঠিতে ভর করে ঝিনাইদহের গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন তিনি।
দীর্ঘ ১১ বছর পর আজ বুধবার ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পাগলাকানাই ও সুরাট ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সীমানা জটিলতা নিয়ে মামলার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে আজ সকাল আটটায় ইভিএমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ভোট হওয়ায় প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষদের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
সকাল থেকে দুই ইউপির কোরাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্র ও লাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। দীর্ঘদিন পর ভোট দিতে পেরে ভোটাররা স্বস্তি প্রকাশ করলেও ইভিএমের কারণে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ করছেন তাঁরা।
গয়েশপুর গ্রামের ভোটার জাহানারা বেগম বলেন, ‘সকাল আটটায় এসে দাঁড়িয়েছি, এখন বেলা ১১টা বাজে। কিন্তু এখনো ভোট দিতে পারিনি। এত দেরি হওয়ায় ভোট দিতে আর মন চাচ্ছে না। মন চাচ্ছে, বাড়ি ফিরে যাই। আর কিছু সময় দেখব, না হলে বাড়ি ফিরে যাব।’
লাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন পর ভোট দিলাম। ইউনিয়নের নতুন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন, এটা খুবই খুশির খবর। তবে ইভিএমে ভোট দিতে দেরি হচ্ছে।’
পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হাসিবুর রহমান বলেন, এ কেন্দ্রে ২ হাজার ৫১৬ ভোটার রয়েছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫৫০টি ভোট পড়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিতে অনেকে বুঝতে না পারায় ঝামেলা হচ্ছে। ভোটারদের প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। এ জন্যই মূলত দেরি হচ্ছে।
দুই ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা শৈলকুপা উপজেলা নির্বাচন অফিসার জুয়েল আহমেদ বলেন, ইভিএম পদ্ধতি নতুন হওয়ার কারণে সকালের দিকে কিছুটা ধীরগতি ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সেটি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে তিনি দাবি করেন। নির্বাচনকে ঘিরে এখনো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আসেনি।
নির্বাচনে সহিংসতা রোধে দুটি ইউপির ১৯টি কেন্দ্রে ১৯৫ জন পুলিশ সদস্য, ৩২৩ জন আনসার সদস্য, ৩ প্লাটুন বিজিবি, ২ প্লাটুন র্যাব, ১০ জন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে আছে বলে জানানো হয়েছে। দুই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, সংরক্ষিত পদে ১৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।