মেয়েদের কাবাডি খেলায় অসহযোগিতা করার অভিযোগে নিজের মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক নারী শিক্ষক। সেই ছবি ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন এই শিক্ষক।
গতকাল বৃহস্পতিবার ন্যাড়া মাথার এই ছবি পোস্ট করেন শিক্ষক জাহিদা পারভীন। বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে দেশে ফেরার দুদিনের মাথায় তিনি এ অভিনব প্রতিবাদ জানালেন।
জাহিদা পারভীন চট্টগ্রাম নগরের ফিরিঙ্গি বাজার এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী ও থানা পর্যায়ে স্কুল ক্রীড়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাঁকে সহযোগিতা না করার অভিযোগ করেন তিনি। চুলে বিশেষ ধরনের বেণি করায় বিদ্যালয়ের কাবাডি দলের কয়েকজন ছাত্রীকে ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক মারধর করেন বলেও অভিযোগ তাঁর।
ঘটনার আট দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওই শিক্ষিকা লেখেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিয়ে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেঞ্চ বেণি করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধে আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি।’
জানতে চাইলে জাহিদা পারভীন বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর কাবাডি দলের মেয়েদের মারধর করা হয়। তাদের অপরাধ ছিল চুলে ফ্রেঞ্চ বেণি করা। তা ছাড়া পরদিন কাবাডি খেলায়ও অংশ নিতে পারেনি মেয়েরা।
জাহিদা পারভীন বলেন, ‘আমাদের সাড়ে নয়টায় উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়েদের মডেল টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া হয় আটটা থেকে। পরীক্ষার হল থেকে মেয়েরা নয়টায় বের হতে চাইলেও তাদের অন্য শিক্ষকেরা বের হতে দেননি। ১০টার পর খাস্তগীর স্কুলে পৌঁছে জানতে পারি প্রতিপক্ষ দলকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’
এ জন্য থানা পর্যায়ের ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষপাতেরও অভিযোগ আনেন জাহিদা। এ নিয়ে সেখানে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হয় বলেও জানান তিনি।
তবে তাঁর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিপা চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রেঞ্চ বেণি করার জন্য ছাত্রীদের কাউকে মারধর করা হয়নি। কাবাডি খেলতে যাওয়ার আগে স্কুলের কাবাডি দলের সঙ্গে হাসিমুখে ছবিও তুলেছি। কিন্তু খাস্তগীর স্কুলে দেরি করে যাওয়ায় খেলায় অংশ নিতে পারেনি। এ জন্য তাঁর (জাহিদা) মন খারাপ ছিল।’
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার আগে গত বুধবার তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। পত্রটি গ্রহণ করে তাঁকে বিদ্যালয়ে না আসার জন্য প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ প্রবলেন, ‘ওই শিক্ষক সেদিন খাস্তগীর স্কুলে গিয়ে তাদের এক শিক্ষকের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। এ নিয়ে অভিযোগও আসে। আমাদের প্রধান শিক্ষকও তাঁকে খেলাধুলায় সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু তিনি এত দিন পর এসে কেন এমন প্রতিবাদ করছেন জানি না। তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। আমরা গ্রহণ করেছি।’