বড় কাজে দেশীয় উপকরণ ব্যবহার

পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো স্টিলের। সেতুতে ব্যবহৃত স্টিলের উপকরণ এবং কলকবজার প্রায় সবই বিদেশ থেকে এসেছে। কিন্তু রড, সিমেন্ট আর বালুর মতো উপকরণ ছিল দেশীয়।

দেশীয়

পদ্মা সেতুর মতো বড় কাজে বাংলাদেশে তৈরি উপকরণের ব্যবহার স্থানীয় নির্মাণ উপকরণ শিল্পের জন্য অন্য মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতুর কাজ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মূল সেতু, নদীশাসন, দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য অবকাঠামো।
পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত উপকরণের একটি তালিকা করেছে। মূল সেতুতে ৩০টি উপকরণের ব্যবহার বেশি হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় রড, সিমেন্ট, বালু, বৈদ্যুতিক কেব্‌ল, পাইপ, ডিজেল, বিটুমিন ও জিও ব্যাগ রয়েছে। নদীশাসন, সংযোগ সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে রড, সিমেন্ট, বালু ও পাথরের ব্যবহার আরও বেশি হয়েছে বলে সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সেতু বিভাগের হিসাবে, পদ্মা সেতুতে সিমেন্ট লেগেছে আড়াই লাখ টনের চেয়ে বেশি। এর সবই দেশে উৎপাদিত। বাংলাদেশে তৈরি রড ব্যবহৃত হয়েছে ৯২ হাজার টনের বেশি।

দেশীয়

সেতুতে বালু লেগেছে সাড়ে তিন লাখ টন। বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার জন্য সোয়া চার কোটি লিটার ডিজেল পোড়ানো হয়েছে। বিটুমিন লেগেছে দুই হাজার টনের বেশি। নদীতীর রক্ষায় ২৫০ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ। এগুলোর সবই বাংলাদেশ থেকে কেনা হয়েছে। দেশে তৈরি বিদ্যুতের কেব্‌ল ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ মিটার এবং পাইপ ১ লাখ ২০ হাজার মিটার।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে বাংলাদেশসহ অন্তত ২০টি দেশের মেধা কাজ করেছে। অর্থাৎ ২০ দেশের বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ও কর্মীর মেধা–শ্রমে এই পদ্মা সেতু। এই সেতু যেসব উপকরণে গড়ে উঠেছে, তা–ও বহুজাতিক।

দেশীয়

সেতু বিভাগের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী, মূল সেতুর কাজে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লুক্সেমবার্গ, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়া নানা উপকরণের জোগান দিয়েছে। সেতুর কর্মকর্তারা বলছেন, এর বাইরে সেতুর কাজে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডসসহ আরও অনেক দেশের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত কলকবজার মধ্যে একটি হচ্ছে ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং। এই বিয়ারিং ভূমিকম্পের সময় সেতুটিকে সুরক্ষা দেবে। সবচেয়ে বড় বিয়ারিংয়ের ওজন ২৫ টনের মতো। এক সেট বিয়ারিং প্রায় ১০ হাজার টন ওজনের ভার বহন করতে সক্ষম। সেতুতে এমন বিয়ারিং বসানো হয়েছে ৯৬ সেট।

সেতু বিভাগ বলছে, পদ্মা সেতুর আগে পৃথিবীর আর কোনো সেতুতে এমন বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়নি। এসব বিয়ারিংসহ ভূমিকম্প প্রতিরোধব্যবস্থা পদ্মা সেতুকে রিখটার স্কেলে প্রায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করবে।

 

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.