বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত।
কিন্তু পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম স্বাধীন কোনো সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব যুক্তিসংগত নয় বলে মন্তব্য করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এমন অভিমত দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যদি বিভাগগুলোর মধ্যে মেকানিজম (প্রক্রিয়া) না-ই থাকত, তাহলে র্যাবের চার শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই বিভাগের অন্য কাউকে দিয়ে তদন্ত করাটা গ্রহণযোগ্য হবে না, এটির কোনো যুক্তি আমি দেখি না।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এর বাইরে যদি যান, আপনি কি ভাবছেন সুশীল সমাজকে দিয়ে তদন্ত করাব? তাহলে তো তারা বলবে যে শাহরিয়ার আলমের নেতৃত্বে ওই খুনগুলো হয়েছে। তারা এ ধরনের রিপোর্ট লিখতে প্রস্তুত আছে।’
মিশেল ব্যাশেলেতের সফর নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, সফরটি অবশ্যই সফল হয়েছে। আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, সেগুলো পূরণ হয়েছে। কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। আশা করি, তাঁরা (কিছু মানুষ) এই পন্থা পরিহার করবেন এবং আন্তর্জাতিক বন্ধু সম্প্রদায়কে শুধু শুধু বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন।’
প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করেন, সরকারের বিরুদ্ধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এবং সেই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত লবিস্টরা অব্যাহতভাবে ভুল তথ্য দিয়ে থাকে।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মতবিনিময়ের প্রসঙ্গ টেনে শাহরিয়ার আলম বলেন, তাদের (নাগরিক সমাজের) একজন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে কতিপয় বিষয়ে বাধ্য করতে সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছিল। তিনি (মিশেল) পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন যে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, নির্বাচন কীভাবে হবে—এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
গুমের অভিযোগ সরকার সব সময়ই অস্বীকার করে আসছে। মিশেল ব্যাশেলেতের সফরকালে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশে তিন কারণে মানুষ ‘নিখোঁজ’ হয়—কেউ অপরাধের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য, কেউ ব্যবসায় লোকসান দিয়ে এবং কেউ কেউ পারিবারিক কারণে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গুমের তালিকায় যে লোকজনের নাম দিয়েছিল, তাঁদের অনেকের ভূমধ্যসাগরে সলিলসমাধি হয়েছে।