সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে অহিংস লড়াইয়ের প্রস্তুতি বিএনপির

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সুষ্ঠু ভোটের দাবি আদায়ে দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি অহিংস লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

দলটির নেতারা বলছেন, এ মুহূর্তে তাঁদের সব মনোযোগ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাওয়া। তবে ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা  এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

আজ ১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর  যখন ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করবে, তার চার মাসের মাথায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে যে তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। ফলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে হলে  আগামী ১৬ মাসই হবে মাঠের আন্দোলনের কঠিন সময়। এ লম্বা সময় দলটি কীভাবে মাঠে থাকবে, সে চিন্তা ও পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছেন নীতিনির্ধারকেরা।

বিএনপি এরই মধ্যে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কিছু কর্মসূচি শুরু করেছে। ২২ আগস্ট থেকে ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ কর্মসূচি শুরুর দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হামলা, মারধর ও বাধার মুখে পড়েছে দলটি। দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের সূত্র জানায়, গত ১০ দিনে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলায় ৮০০ নেতা-কর্মী আহত হন। ১ হাজার ২০০–এর বেশি মামলা এবং ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে ‘খেলা হবে’ বলে বিএনপিকে কঠোর হুঁশিয়ারি জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যদিও কর্মসূচিতে হামলা, মামলা এবং সরকারি দলের নেতাদের হুমকিকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন শুরুতেই বানচাল করার একটি কৌশল বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।

সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে অহিংস লড়াইয়ের প্রস্তুতি বিএনপির

 

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, ‘আমরা জানি, সরকার হামলা, মামলা করবে। সন্ত্রাস, ভীতি সৃষ্টি করা ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নেই। কারণ, তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তারা যা–ই করুক, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কাজ করব।’

দলীয় সূত্র জানায়, বিভিন্ন স্থানে হামলা, বাধার পরও সারা দেশে যে কর্মসূচি শুরু করেছে, সেটা অব্যাহত রাখবে। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত রাখতে একের পর এক বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। কোথায়, কীভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, সেদিকে কেন্দ্র থেকে নজর রাখা হচ্ছে। কার্যত এ কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক সক্ষমতা পরখ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

যখন বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সখ্য বাড়িয়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দলটির পুরোনো রাজনৈতিক মোর্চা ২০-দলীয় জোটের শরিকদের পারস্পরিক বোঝাপড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষ করে ‘জামায়াতে ইসলামী আর ২০-দলীয় জোটে নেই’ বলে এক ঘরোয়া সভায় দলটির আমির শফিকুর রহমানের বক্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি থেকে জামায়াত একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আন্দোলনের মাঠে এর কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে বেশ কৌতূহল আছে রাজনৈতিক মহলে।

অবশ্য জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ২০-দলীয় জোট এখন আর সক্রিয় নেই। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। জামায়াত বর্তমান সরকারের দুঃশাসন এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেবে।

নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা ডালপালা মেলছে। নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি কতটা এককাট্টা থাকে বা আন্দোলনে জ্যেষ্ঠ নেতারা কতটা স্বতঃস্ফূর্ত থাকবেন, তা নিয়েও দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা আছে। এর কারণ, এক-এগারোর সময় থেকে ‘সংস্কারপন্থী’দের নিয়ে দলের উচ্চপর্যায়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাসের দানা বাঁধে, তা এখনো রয়ে গেছে। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়া না–যাওয়া নিয়েও জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে মতবিরোধ আছে বলে  একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

 

অবশ্য বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী মনে করেন, গত ১৩–১৪ বছর নানা রকম দমন–পীড়ন, গুম-খুনের পরও বিএনপি দল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, এটা বিএনপির সফলতা। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভাঙেনি।

দিলারা চৌধুরীর মতে, এখন  বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করা। এটি খুব কঠিন হবে। কারণ, সরকার একেবারে আপসহীন মনোভাবে আছে। তবে বিএনপির জন্য সুবিধাজনক বিষয় হচ্ছে, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাইছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বাইরের চাপও আছে। এ ছাড়া বিএনপি সহিংসতা না করে আন্দোলন করতে চাইছে—এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক।

 

 

দাবি দাবি দাবি

অভিনেতা সাগর হুদার প্রয়াণ

মাদক মামলায় গোল্ডেন মনিরের বিচার শুরু

Leave A Reply

Your email address will not be published.