জেমস ওয়েবে এবার গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব একের পর এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করেই চলেছে। এবার এটি সৌরজগতের বাইরে একটি গ্রহের (এক্সোপ্লানেট) বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকার বিষয়টি শনাক্ত করেছে। ওই গ্রহের নাম ডব্লিউএএসপি-৩৯।

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল কখনো প্রাণ ধারণের উপযোগী নয় বলে মনে করতেন গবেষকেরা। এখন সেখানে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি সফলতার সঙ্গে শনাক্ত হওয়ার পর সেই গবেষকেরাই ভবিষ্যতে গ্রহটিতে পাথুরে কোনো বস্তুর চেয়ে প্রাণের খোঁজ চালানোর চেষ্টা করবেন।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ প্রকল্পে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের

অধ্যাপক নাতালি বাতালহা টুইট করে বলেন, ‘আমার প্রথম ধারণা হচ্ছে: বাহ্, পৃথিবীর মতো আকার গ্রহগুলোর বায়ুমণ্ডল শনাক্তের সুযোগ সত্যিই আমাদের আছে।’

ডব্লিউএএসপি-৩৯ নামের এই গ্যাসীয় গ্রহটি ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে একটি নক্ষত্রের আশপাশে প্রদক্ষিণ করছে। গ্রহটি নিয়ে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ শিগগিরই নেচার সাময়িকীতে প্রকাশের কথা বলছেন গবেষকেরা।

জেমস ওয়েবে এবার গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত

 

ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের জ্যোতিঃপদার্থবিদ পিয়েরে অলিভিয়ের লাগেজ বলেন, এটি সুপার-আর্থ (পৃথিবীর চেয়ে বড় কিন্তু নেপচুনের চেয়ে ছোট গ্রহ) ও পৃথিবীর সমান আকৃতির গ্রহগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণার দ্বার খুলে দিয়েছে।

নাসার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডব্লিউএএসপি-৩৯ নামের গ্রহটি কীভাবে গঠিত হয়েছে, কার্বন ডাই-অক্সাইড আবিষ্কারের মাধ্যমে তা জানতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। গ্রহটি চার দিন পর একবার নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করে। এটির ভর বৃহস্পতির চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু এটির ব্যাস বৃহস্পতির চেয়ে ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

গ্রহটির কক্ষপথের ফ্রিকোয়েন্সি এবং বৃহৎ বায়ুমণ্ডলের কারণে জেমস ওয়েবের এনআইআরস্পেক নামের অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড সেন্সরে কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি সহজে ধরা পড়েছে। গৃহটি নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যখনই অতিক্রম করে, তখনই প্রায় পুরো আলো বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু নক্ষত্রের প্রান্ত আশপাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অল্প পরিমাণ আলো বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে যেতে পারে। জেমস ওয়েবের অতিসংবেদনশীল এনআইআরস্পেক গৃহটির বায়ুমণ্ডলের এই সামান্য পরিবর্তন শনাক্ত করতে সক্ষম। এ থেকে বিজ্ঞানীরা সেখানকার গ্যাসের গঠন বের করতে সক্ষম হন।

এর আগে হাবল ও স্পিটজার টেলিস্কোপ ডব্লিউএএসপি-৩৯ গ্রহটির বাষ্প, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এবারে এ তালিকায় জেমস ওয়েব যুক্ত করল কার্বন ডাই-অক্সাইডের তথ্য।

জেমস ওয়েবে এবার গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত

নাসার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির গবেষক জাফর রুস্তমকুলভ বলেছেন, এটি একটি বিশেষ মুহূর্ত। এ আবিষ্কারের মাধ্যমে গৃহবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমা অতিক্রম করা সম্ভব হয়েছে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও নবতম টেলিস্কোপ হিসেবে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি। সম্প্রতি এ টেলিস্কোপে তোলা বৃহস্পতি গ্রহের বেশ কিছু চোখধাঁধানো ছবি উন্মুক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপটির উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি তৈরিতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। গত বছরের শেষ দিকে এটি মহাকাশে কার্যক্রম শুরু করে। গত গ্রীষ্ম থেকেই ইনফ্রারেড ক্যামেরা ব্যবহার করে মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণ করছে টেলিস্কোপটি। এটি পৃথিবী থেকে ১০ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত। গত মাসে টেলিস্কোপটির মাধ্যমে ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের দৃশ্য সামনে আনেন বিজ্ঞানীরা।

 

 

 

 

৪০ বছর পর মাঠে বসে ঘরোয়া ফুটবল দেখার সুযোগ পেল ইরানি নারীরা

ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে ‘টমেটো ফ্লু’

Leave A Reply

Your email address will not be published.