ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা বলেছে, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিডের সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
ইউক্রেনের এনারগোয়াত জানায়, রুশ সেনাদের গোলাবর্ষণে গত বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছের বাসিন্দাদের সম্ভাব্য তেজস্ক্রিয়তার ক্ষতি থেকে রক্ষায় আয়োডিন ট্যাবলেট বিতরণ শুরু করেছে। খবর আল-জাজিরার।
এর আগে অল্পের জন্য বিশ্ব আরেকটি পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে বলে দাবি করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেন, রুশনিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বড় ধরনের তেজস্ক্রিয়তার শঙ্কায় পড়ে ইউরোপ। তিনি ওই এলাকা থেকে দ্রুত রুশ সেনা প্রত্যাহারে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রুশ সেনাদের গোলাবর্ষণে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাশে অগ্নিকাণ্ডের কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে জাপোরিঝিয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশিয়ার একজন কর্মকর্তা এ হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেন।
জেলেনস্কি বলেন, শুধু ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবস্থা সচল থাকায় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের কারিগরি কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে বৃহস্পতিবার রাতের ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘সেখানে কর্মরত আমাদের কর্মীরা যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করতেন, তাহলে আমাদের ইতিমধ্যেই তেজস্ক্রিয়তা বিপর্যয়ের পরিণতি সামাল দিতে হতো।’
জাপোরিঝিয়া ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। স্থাপনাটির আশপাশে ইউক্রেন ও রুশ বাহিনীর পাল্টাপাল্টি হামলার কারণে এর নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে। মস্কো ইউরোপকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের ‘খাদের কিনারে’ নিয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ করেন জেলেনস্কি।
তবে জাপোরিঝিয়ায় রাশিয়ার নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ভ্লাদিমির রোগভ হামলার জন্য ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রাখার অভিযোগ করেছেন তিনি। রোগভ বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাছের একটি বনে আগুন লাগান ইউক্রেনের সেনারা। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কাটান। বিদ্যুৎসংযোগে শর্টসার্কিটের কারণে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। গত মার্চে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। এরপর থেকে ইউক্রেনের কর্মী দিয়েই সেটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের সুযোগ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, সংস্থাটির কর্মকর্তারা ওই পারমাণবিক কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণ শুরুর খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছেন।
পারমাণবিক বিশেষজ্ঞরা গোলাবর্ষণের ফলে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও ইয়েল স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক পল ব্র্যাকেন বলেন, ‘গোলাবর্ষণে পারমাণবিক চুল্লির দেয়াল ফেটে বিশাল এলাকায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। জাপোরিঝিয়ার নিরাপত্তায় ব্যর্থ হলে হাজার হাজার লোক মারা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাব ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।’
সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে