উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি আরও বেড়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী পাঁচটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকো
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, পানিবন্দী ২৮০টি পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া ও মটুকপুর গ্রামের কমপক্ষে ৪০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এই ইউপির চেয়ারম্যান সোহরাব আলী বলেন, পানিবন্দী মানুষের তালিকা করা হচ্ছে। শুকনো খাবার দেওয়া হবে।
গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর ও জয়দেব এলাকায় প্রায় ২৫০ পরিবার এবং নোহালী ও আলমবিদিতর ইউনিয়নে ২৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রামে সড়কে ভাঙন, ঝুঁকিতে বাঁধ
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন ৪০ হাজার মানুষ। রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র–তীরবর্তী বাগুয়ার চর এলাকায় ৩০০ মিটার পাকা সড়ক ভেঙে গেছে। বাগুয়ারচর, বাইটকামারী, খনজমারা, বাইশপাড়া, ঝুনকিরচর, ঝিগনিকান্দা, তিনতেলীচরসহ প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। ইতিমধ্যেই ৫০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপঙ্কর রায় বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে ঢেউটিন, খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ও বাগুয়ারচর, বাইটকামারী গ্রাম রক্ষায় দুই কিলোমিটারে জিও ব্যাগ দিয়ে তীর সংরক্ষণের প্রস্তাব করেছিলাম। বরাদ্দ পেয়েছিলাম ২৮০ মিটারের। তাই দিয়ে কাজ করা হয়েছে।’
সদর উপজেলার সারডোব এলাকায় গতকাল দেখা যায়, চারটি স্থানে বাঁধ ধসে গেছে। পানির স্রোত¯বাঁধটি ভেঙে ভেতরে ঢুকছে। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের ২০০ ফুট উত্তরে কিছু বস্তায় বালু ভরছেন মজুরেরা। তবে পাউবোর কাউকে পাওয়া যায়নি।
সারডোব গ্রামের আবদুল শালেত বলেন, ‘বাঁধ ভাঙি যাবার নাগছে, ওয়াপদার লোক আসিল না।’
জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সারডোবের বাঁধ মেরামতে অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ করতে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু তা না পাওয়ায় কাজ করা যায়নি। তবে বাঁধটি রক্ষায় এক হাজার বালুর বস্তা ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাটে ১৪ বিদ্যালয়ের মাঠে পানি
লালমনিরহাটে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে ১৫টি ইউনিয়নের সাড়ে ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণার মতো পরিস্থিতি হয়নি। সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ইউনিয়নের সাত শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ১১০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ অর্থ সহায়তা হিসেবে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধায় আরও দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত
গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘণ্টায় ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ও গজারিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে এ জেলার সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলো। এসব ইউনিয়নে ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী।
গাইবান্ধা পাউবোর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে ফুলছড়ির উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী ও ফজলুপুর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী, উজালডাঙা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। বাঁধটি ভাঙলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, পাউবো জরুরি কর্মসূচির অংশ হিসেবে রতনপুর-সিংড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছে। ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে। আশা করা যায়, বাঁধের ক্ষতি হবে না।
নীলফামারীতে পরিস্থিতির অবনতি
নীলফামারীতে গতকাল তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ জেলায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ১৫টি চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন।
পাউবোর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে রেখে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
হাজার মানুষ। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।