ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সীমান্তবর্তী বিদ্যানগর শের বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নলকূপ বসানোর সময় বিকট এক আওয়াজ হয়। এরপর থেকেই পাইপ দিয়ে তীব্র গতিতে গ্যাস পানি ও বালি আসেতে থাকে। পানির গতি ক্ষণে ক্ষণে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার থেকে ওই বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পাইপ দিয়ে তীব্র বেগে গ্যাস ও বালি হওয়ার পর বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি দেবে গেছে। দেবে গেছে বিদ্যালয়ে থাকা দুটি নারকেল গাছ ও একটি নলকূপ। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ের দুটি ভবনসহ আশপাশের এলাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা থেকে বাপেক্স, পেট্রোবাংলা এবং কসবার সালদা গ্যাসক্ষেত্রের জিওলজিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এদিকে উৎসুক জনতার ভীড় ঠেকাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়টি জানতে পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লোকমান হোসেনসহ সালদা গ্যাস ক্ষেত্র সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে পুলিশ মোতায়েন ও সতর্কতা হিসেবে বিদ্যালয়ের চারিদিকে লাল নিশান টানিয়ে দেয়া হয়।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আজাদুর রহমান বলেন, সোমবার থেকে বিদ্যালয়ের মাঠে একটি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছিল। নলকূপের পাইপ ৫৪০ মিটার গভীরে প্রবেশ করার পর গত বুধবার সকাল থেকে হঠাৎ করে তীব্র গতিতে ও বিকট শব্দে পাইপ দিয়ে গ্যাস, পানি ও বালি বের হতে থাকে। এতে করে পুরো বিদ্যালয়ের মাঠ মহুর্তেই বালি এবং কাঁদাযুক্ত পানিতে ডুবে যায়। পরে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে বিদ্যালয়টি সাময়িকভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন ভূইয়া জানান, বুধবার সকাল থেকে গভীর নলকূপের পাইপ দিয়ে তীব্র বেগে ও বিকট শব্দে গ্যাস, পানি ও বালি বেরুনো শুরু হলে বিদ্যালয় সাময়িকভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি মাটির নীচে অনেকটা দেবে যায়। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের টিউবওয়েলটিও অনেকটা দেবে গেছে। বিদ্যালয়ের দুটি নারিকেল গাছের নীচের মাটি সরে গেছে। এতে করে বিদ্যালয়ের ভবন দুটিসহ আশপাশ এলাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে বাপেক্সের জিওলজিক্যাল বিভাগের জিএম আলমগীর হোসেন জানান, ৭২ ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করবেন জিওলজিক্যাল বিশেজ্ঞরা। পরে তারা এই গ্যাস পকেট গ্যাস, নাকি স্থায়ী গ্যাসের অস্তিত্ব এ সর্ম্পকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন।
সবা থানার উপ-পরিদর্শক জিহাদ দেওয়ান জানান, উৎসুক জনতার ভীড় ঠেকাতে তারা হিমসিম খাচ্ছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ পুরো এলাকাটি ঘিরে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নলকূপের পাইপ দিয়ে এখনো গ্যাস ও বালি আসা বন্ধ হচ্ছেনা। ইতিমধ্যেই পাইপ দিয়ে আসা বালি পড়ে বিদ্যালয়ের মাঠ ৩ ফুট উঁচু হয়েছে। ঢাকা থেকে পেট্রো বাংলা ও বাপেক্সের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।