ঋণ খেলাপি হওয়া ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পাকিস্তান সরকার।
এ লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির জন্য একটি অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
অধ্যাদেশে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অন্য আরও ছয়টি আইন পাস কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক যেসব প্রক্রিয়া মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা যাতে মানতে না হয় সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের।
রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রির জন্য পাকিস্তানের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাওয়া অধ্যাদেশের নাম ‘ইন্টার গভর্নমেন্টাল কমার্শিয়াল ট্রানজেকশনস অর্ডিন্যান্স ২০২২’। এই অধ্যাদেশের কারণে কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রাদেশিক সরকারগুলোকে নির্দেশ দিতে পারবে। সেই নির্দেশ মানতে প্রাদেশিক সরকার বাধ্য থাকবে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি সংস্থার সম্পদ ও শেয়ার বিদেশে বিক্রির বিরুদ্ধে কোনো আবেদন গ্রহণ না করতে সরকার দেশের আদালতকেও নিষেধ করেছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন আজ সোমবার জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে অনুমোদন পেলেও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি অধ্যাদেশে এখনো সই করেননি।
গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এ অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস কোম্পানি, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের শেয়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করতে চায় সরকার। আসন্ন ঋণ খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই এই অধ্যাদেশ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু মে মাসে আমিরাত ঋণ দিতে আপত্তি জানায়। কারণ হিসেবে দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাকিস্তান এখনো আগের ঋণ শোধ করতে পারেনি। ঋণের বদলে আমিরাত পাকিস্তানে দেশীয় কোম্পানির বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেয়।
চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল বলেন, বেসরকারিভাবে একটি লেনদেন করতে সাধারণত ৪৭১ দিন সময় লাগে। তিনি আরও বলেন, সরকারকে জরুরিভাবে তহবিল সংগ্রহের জন্য কয়েক দিনের মধ্যে বিদেশি সরকারগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়ে শর্তের মুখে পড়েছে পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্ত হচ্ছে, পাকিস্তানের যে আর্থিক ঘাটতি, সেটা পূরণ করার জন্য ইসলামাবাদকে তাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছ থেকে ৪০০ কোটি ডলারের বন্দোবস্ত করতে হবে।
পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন সংকটে। এ সপ্তাহে দেশটির মুদ্রার মান কমেছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৯৯৮ সালের নভেম্বরের পর পাকিস্তানের মুদ্রার মান কখনো এতটা কমেনি। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে যে সরকার অর্থনীতির সংকট সামাল দিতে গিয়ে কতটা সমস্যায় পড়েছে। পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সম্পদ বিক্রির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে, মারি গ্যাস কোম্পানি, অয়েল গ্যাস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড ও পাকিস্তান পেট্রলিয়াম লিমিটেডের শেয়ার বেচে প্রকৃত মূল্য পাওয়া যাবে না। কারণ, প্রকৃত মূল্যের চেয়ে এখন এসব কোম্পানির বাজারমূল্য অনেক কমেছে।