ইউরোপে ইতালির পর করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে স্পেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন ২৮৫ জনসহ মৃত্যুর সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৮ জন। নতুন করে ৩ হাজার ৯২৫ জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৪৯৬ জন। এছাড়া দেশটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ১২৫ জন। দেশটির জাতীয় নাগরিক সুরক্ষা প্রধান এসব তথ্য জানান।
স্পেনে বর্তমানে ২১ হাজার ৯৯৩ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ হাজার ৩৮১ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ১ হাজার ৬১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ৩৯ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৬১ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “আমাদেরকে এখনও করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সবচেয়ে ক্ষতিকারক প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে, যা আমাদের উপাদানের সমষ্টি এবং নৈতিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সমাজ হিসাবে আমাদের চেতনা পরীক্ষা করবে।”
সানচেজ বলেছিলেন, ১৯৩৬-৩৯ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্পেন এতটা নাটকীয় পরিস্থিতিময় সময় অতিবাহিত করেনি, যেখানে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। যুদ্ধকালীন অর্থনীতির সমান্তরালে বর্তমান অবস্থাকে আঁকতে বলেছিলেন তিনি। তার সরকার স্পেনে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে মুখোশের মতো লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
সানচেজের বামপন্থী সরকার এক সপ্তাহ আগে দেশব্যাপী ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল, মানুষকে প্রয়োজনীয় জরুরি ছাড়া সব কিছু থেকে বিরত থাকতে বলেছিল। সানচেজ তার জনগণের এই পদক্ষেপের প্রতি “অনুকরণীয়” প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এই বিধিনিষেধ জোরদার করার কোনও পরিকল্পনা তার নেই, যাকে তিনি ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন বলে অভিহিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা বাড়ানোর বিষয়েও উল্লেখ করেননি, যদিও তিনি আরও কয়েক সপ্তাহ আগে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।
এছাড়া করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ৬৩৮ জনসহ মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ২৫ জনের। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৫৫। চীনের বাইরে মারা গেছে ৮ হাজার ১৪৩ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ হাজার ২৯৫ জনসহ মোট আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৮৯২ জন। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৭৯৮ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৪ জন।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৮৭ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ৯ হাজার ৩৮২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ১২ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৮৮ শতাংশ।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সেখানে কেউ মারা যায়নি। সেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ২৫৫ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮ জন। এছাড়া চীনে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭১ হাজার ৭৪০ জন।
চীনে বর্তমানে ৬ হাজার ১৩ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ হাজার ৮৬ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ১ হাজার ৯২৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯৬ শতাংশ।
অন্যদিকে ইতালির জাতীয় নাগরিক সুরক্ষা প্রধান আঞ্জেলো বোরেল্লি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন ৭৯৩ জনসহ দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ৮২৫ জন। নতুন করে ৬ হাজার ৫৫৭ জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৫৭৮ জন। এছাড়া দেশটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬ হাজার ৭২ জন।
ইতালিতে বর্তমানে ৪২ হাজার ৬৮১ জন আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ হাজার ৮২৪ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ২ হাজার ৮৫৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ৪৪ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৫৬ শতাংশ।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়সুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।
এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।
উহান, চীনের শিল্পোন্নত এই শহর থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ভাইরাসটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৮টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।