করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) ব্রিটেনের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১০ জন। এ পর্যন্ত দুই বাংলাদেশিসহ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্রিটেনের জনগণ।
ব্রিটিশ সরকারের প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা প্রফেসর ক্রিস হুইট বলেছেন, সনাক্তরা সকলেই ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যুক্তরাজ্যে এ পর্যন্ত ৩৭,৭৪৬ জনকে পরীক্ষা করে তাদের মধ্যে ১ হাজার ১৪০ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের কোয়ারটাইনে রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে অনেক উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়াবে। জনগনকে জানতে হবে যে, প্রতিটি রুগীর জীবন বাঁচাতে এনএইচএস-এর কর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসটি সম্পর্কে সকলকে সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
এদিকে ব্রিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯ জন বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে সরকারকে আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তারা এক চিঠিতে জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে সরকারকে তা মোকাবেলায় বেশ বেগ পেতে হবে। বর্তমানে এনএইচএস করোনা মোকাবেলায় যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অব্যাহত থাকলে অনেক জীবন হুমকির মধ্যে পড়বে।
জানা গেছে, ব্রিটেনে করোনায় মারা যাওয়া ২১ জনের মধ্যে অধিকাংশই আগে থেকেই অসুস্থ এবং বয়স্ক লোক ছিলেন। অধিকাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বসবাসকারী টাওয়ার হ্যমলেটসে বাংলাদেশিগন আতঙ্কের নিয়ে বসবাস করছেন। খুব কম সংখক মানুষ ঘর থেকে বের হন। ব্যবসা বানিজ্য ও দোকান বেশীরভাগই বন্ধ করার চিন্তা করছে। রাস্তা ঘাট বাস ও ট্রেনে জনসাধারণের উপস্থিত কম। আতংকে লন্ডনের বিভিন্ন স্থানের সুপার স্টোরগুলো থেকে মানুষ শুকনো খাবার কিনে রাখছে। আর এ কারণে অনেক সুপারস্টোরে শুকনো খাবার ও হাত পরিস্কারের পণ্যসহ অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্রিটেন সরকার আগামী সপ্তাহে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। ভাইরাসটি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার সমালোচনার মুখে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ার বিরোধিতা করে আসছেন। সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ও প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তার সঙ্গে মন্ত্রীরা আগামী সপ্তাহে জনসমাগমসহ বিভিন্ন ধরনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।
শুক্রবার ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগের সব খেলা আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া আয়োজকরা লন্ডন ম্যারাথনও স্থগিত করেছেন। ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ (৯৩) আগামী সপ্তাহে জন সম্পৃক্ত কর্মসূচি বাতিল করেছেন বলে শুক্রবার বাকিংহাম প্রাসাদ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনসনও মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় ও মেয়র নির্বাচন এক বছরের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সরকার যাতে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে এজন্য সংশ্লিষ্ট আইন আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞাসহ ও আয়োজকদের ক্ষতিপূরণের বিষয় থাকবে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞার ফলে সংগীত উৎসব, উইম্বলডন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ ও গ্র্যান্ড ন্যাশনাল ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রভাব পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৪৯৯ জনসহ মোট মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮৩৫। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯৯। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫২৯। এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৯১৯ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮২৪। চীনের বাইরে ৭৫ হাজার ৭০৫ মানুষ।
বর্তমানে ৭৪ হাজার ৭৭৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৮ হাজার ৭৮৭ জনের অবস্থা স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে এবং বাকি ৫ হাজার ৮৮৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকেই অসুস্থ এমন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই বয়স্ক লোকজন।
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনসহ অধিক আক্রান্ত দেশ ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রায় সকল দেশ। ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৫১টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
যেসব দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে-
নিহত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে চীনে ৩ হাজার ১৯৯, ইটালিতে ১ হাজার ৪৪১, ইরানে ৬১১, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭৫, যুক্তরাষ্ট্র ৫৭, ফ্রান্স ৯১, স্পেন ১৯৬, জাপান ২২, ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৭, ইরাক ১০, হংকং ৪, অস্ট্রেলিয়া ৩, যুক্তরাজ্য ২১, নেদারল্যান্ড ১২, জার্মানি ৯, ইন্দোনেশিয়া ৫, বেলজিয়াম ৪, সুইজারল্যান্ড ১৩, সান ম্যারিনো ৫, লেবানন ৩, ফিলিপাইন ৮, মিশর ২, আর্জেন্টিনা ২, পোলান্ড ৩, আয়ারল্যান্ড ২, ভারত ২, নরওয়ে ৩, সুইডেন ২, বুলগেরিয়া ২, আলজেরিয়া ৩, গ্রীস ৩, পানামা, স্লোভেনিয়া, মরক্কো, থাইল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, কানাডা, লুক্সেমবার্গ, আলবেনিয়া, পানামা, পানামা, ইকুয়েডর, আজারবাইজান, ডেনমার্ক, মরক্কো, ইউক্রেন, সুদান, গায়ানা ও তাইওয়ানে ১ জন করে।