চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস ৫৮টিরও বেশি দেশে শনাক্ত হয়েছে। তবে এ ভাইরাস শনাক্তের জন্য স্থল-বন্দরগুলোতে স্ক্যানার বসানো হলেও খুলনা বিভাগের কোথাও এ রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে পাঁচটি বেড বিশিষ্ট আলাদা ওয়ার্ড করা হয়েছে। রোগ শনাক্ত করতে না পারলে– কোন ধরনের রোগীর চিকিৎসা দেয়া হবে এই বেডে এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এখনই হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ স্ক্যানার বাসানো উচিত। কারণ বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে না। এতে মানবিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর (জেনারেল) হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় খুলনার কোনো হাসপাতালে নেই এ ভাইরাস শনাক্তের ব্যবস্থা। শুধুমাত্র খুমেক হাসপাতাল, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ বেডের ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলা হয়েছে। আর মোংলা বন্দরে ২৮ জানুয়ারি বসানো হয়েছে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল বিলবোর্ড। এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ জানার পাশাপাশি এ রোগ থেকে প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সব ধরনের ভাইরাস আক্রান্তদের উপসর্গ প্রায় একই হওয়ায় তারা মূলত কোনো রোগীকেই করোনা সন্দেহ করছেন না। সাধারণত বিদেশ ফেরত বা চীনের সাথে আসা যাওয়া করেন নিয়মিত এমন কোনো ব্যক্তির জ্বর সর্দি কাশি থাকলে চিকিৎসকরা ঢাকায় আইডিআরসিতে রোগীকে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে থাকেন।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএমএম মোর্শেদ জানিয়েছেন, এ হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি থেকে পাঁচ শয্যার একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে লক্ষণ দেখে রোগী ভর্তি করা হলেও এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করতে হবে।
ওয়ার্ডটির দায়িত্বে থাকা খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এসএম কামাল বলেন, হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগের পাশের একটি ওয়ার্ডে পাঁচটি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে আগে ডেঙ্গু ওয়ার্ড ছিল। ওই ওয়ার্ডটির জন্য একজন সহকারী রেজিস্ট্রার এবং একজন নার্সকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আরও কিছু জনবল পদায়ন করা হয়েছে। তবে খুলনায় কেন ঢাকার বাইরে কোথাও এ ভাইরাস সনাক্তের মত কোন স্ক্যানার বা প্যাথলোজিক্যাল সুযোগ নেই।
খুলনার সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, হাসপাতালের পৃথক ওয়ার্ডে ডিউটিকালীন চিকিৎসক-নার্সদের মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উপজেলা হাসপাতালতেও এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন এ ভাইরাসটির পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা খুলনায় নেই। ফলে লক্ষ্মণ দেখে সন্দেহভাজন কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাকে ঢাকার মহাখালীর আইইডিসিআর অথবা কুর্মিটোলা হাসপাতালে পাঠানো হবে।
তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রাফিদ শাহরিয়ার বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কিত লিফলেট করা হয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে ব্যানারও তৈরি করা হচ্ছে।
ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ৫ বেডের পৃথক ওয়ার্ড ২৯ জানুয়ারি চালু করা হয়েছে।
খুলনাস্থ মোংলা পোর্ট হেলথ অফিসার ডা. সুফিয়া খাতুন বলেন, মোংলা পোর্ট কেন্দ্রিক সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে একটি ইলেক্ট্রিক্যাল বিলবোর্ড দেওয়া হয়েছে। যেটি মোংলা বন্দর গেটে ২৮ জানুয়ারি স্থাপন করা হয়েছে।