চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৩৩৬। খবর মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
এ পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ইউরোপের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আগামী ৩০ দিনের জন্য সমস্ত ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে।
এ সময় তিনি আরও বলেছিলেন যে “শক্তিশালী তবে প্রয়োজনীয়” এই বিধিনিষেধ যুক্তরাজ্যের জন্য প্রযোজ্য হবে না, যেখানে ইতিমধ্যে ৪৫৬ জন ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে এবং ৮ জন মারা গেছে।
বুধবার ওভাল অফিস থেকে মি. ট্রাম্প বলেছেন, “নতুন কোনও সংক্রমণ যেন আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য আমরা ইউরোপ থেকে সমস্ত ভ্রমণ স্থগিত করব। যেটি শুক্রবার মধ্যরাতে কার্যকর হবে।”
মি. ট্রাম্প আরও বলেছিলেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো “একই সাবধানতা অবলম্বন করতে ব্যর্থ হয়েছিল।”
তিনি চীনের বাইরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ ইতালির কঠোর নতুন বিধিনিষেধের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ কথা বলেছেন। দেশটি দেশব্যাপী লকডাউনের অংশ হিসাবে খাদ্যের দোকান এবং ফার্মেসী ব্যতীত সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে।
মি, ট্রাম্প বলেছিলেন, ভ্রমণ স্থগিতাদেশ ইউরোপ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা “প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্য এবং পণ্যসম্ভারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।”
তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং কংগ্রেসকে মার্কিন অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে বড় ধরনের কর মওকুফ বিষয়ক আইন পাসের আহ্বান জানিয়েছেন।
“আমেরিকান জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা ফেডারেল সরকার এবং বেসরকারী খাতের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করছি”, বলছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় করোনা ভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বুধবার (১১ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়াসুস বলেন, গত দুই সপ্তাহে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ভাইরাসের আশঙ্কাজনক মাত্রায় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি ‘গভীরভাবে শঙ্কিত’।
তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারকে ‘জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ’ গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রাদুর্ভাব থেকে উত্তরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো পৃথিবী। এতে বিশ্বজুড়ে নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৩ জন। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৯ জন। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৪৬৪ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৯৬ জন। চীনের বাইরে ৪৫ হাজার ৪৭৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫ হাজার ৭০৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ হাজার ২৮৬ জন সুস্থ হয়েছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকেই অসুস্থ এমন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই বয়স্ক লোকজন।
বৃহস্পতিবার সকালে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, চীনে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১৮ জন এবং মারা গেছে ১১ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৮০ হাজার ৭৯৬ জন এবং মারা গেছে ৩ হাজার ১৬৯ জন।
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনসহ অধিক আক্রান্ত দেশ ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রায় সকল দেশ। ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২৪টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৩২টি দেশে।
যেসব দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে-
নিহত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে চীনে ৩ হাজার ১৬৯, ইটালিতে ৮২৭, ইরানে ৩৫৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬৬, যুক্তরাষ্ট্র ৩৮, ফ্রান্স ৪৮, স্পেন ৫৫, জাপান ১৫, ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৭, ইরাক ৭, হংকং ৩, অস্ট্রেলিয়া ৩, যুক্তরাজ্য ৮, নেদারল্যান্ড ৫, জার্মানি ৩, বেলজিয়াম ৩, সুইজারল্যান্ড ৪, সান ম্যারিনো ২, লেবানন ২, ফিলিপাইন ২, পানামা, মরক্কো, মিশর, থাইল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, কানাডা, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, আলবেনিয়া, পানামা, বুলগেরিয়া ও তাইওয়ানে ১ জন করে।