চীন থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে এবার আক্রান্ত হয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজ। শনিবার (১৪ মার্চ) স্পেনের সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতির বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলেছে, স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন মনক্লোয়ায় পেদ্রো সানচেজের স্ত্রী বেগোনা গোমেজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে চলাফেরা করা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা যায়, তারাও করোনায় আক্রান্ত। বেগোনা গোমেজ বর্তমানে মনক্লোয়াতেই আছেন। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেয়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করছেন তিনি।
কয়েক দিন আগে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন এমন শঙ্কায় স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে গিয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো। পরবর্তীতে ট্রুডোর স্ত্রী সোফির শরীরে করোনা শনাক্ত করা হয়।
সিএনএ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর শরীরে এখনও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেনি। এছাড়া তার স্ত্রী সোভি করোনায় আক্রান্ত হলেও তার অবস্থা স্থিতিশীল। শারীরিক অবস্থা অতটা গুরুতর নয়। তারা দুজনই এখন ১৪ দিনের আইসোলেশনে রয়েছেন।
স্পেনে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯১ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এতে দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১৯৬ জনের।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রে সানচেজ এ সংকট মোকাবিলার জন্য এরই মধ্যে স্টেট অব এলার্ট জারি করেন। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবার (১৬ মার্চ) থেকে দেশটি লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করতে যাচ্ছেন পেদ্রো সানচেজ।
গত শুক্রবার দেশটির বড় শহরগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকে বার, রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। শুধু প্রাথমিক প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য সুপার মার্কেট, ফার্মেসি, পেট্রল পাম্পগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে ৪০৫ জনসহ ৫ হাজার ৮৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৯৯। চীনের বাইরে নিহত হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫২৯। এর মধ্যে ৭৫ হাজার ৯১৯ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮২৪। চীনের বাইরে ৭৫ হাজার ৭০৫ মানুষ।
বর্তমানে ৭৪ হাজার ৭৭৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৮ হাজার ৭৮৭ জনের অবস্থা স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে এবং বাকি ৫ হাজার ৮৮৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকেই অসুস্থ এমন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই বয়স্ক লোকজন।
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীনসহ অধিক আক্রান্ত দেশ ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রায় সকল দেশ। ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৫১টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
যেসব দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে-
নিহত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে চীনে ৩ হাজার ১৯৯, ইটালিতে ১ হাজার ৪৪১, ইরানে ৬১১, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭৫, যুক্তরাষ্ট্র ৫৭, ফ্রান্স ৯১, স্পেন ১৯৬, জাপান ২২, ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ৭, ইরাক ১০, হংকং ৪, অস্ট্রেলিয়া ৩, যুক্তরাজ্য ২১, নেদারল্যান্ড ১২, জার্মানি ৯, ইন্দোনেশিয়া ৫, বেলজিয়াম ৪, সুইজারল্যান্ড ১৩, সান ম্যারিনো ৫, লেবানন ৩, ফিলিপাইন ৮, মিশর ২, আর্জেন্টিনা ২, পোলান্ড ৩, আয়ারল্যান্ড ২, ভারত ২, নরওয়ে ৩, সুইডেন ২, বুলগেরিয়া ২, আলজেরিয়া ৩, গ্রীস ৩, পানামা, স্লোভেনিয়া, মরক্কো, থাইল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, কানাডা, লুক্সেমবার্গ, আলবেনিয়া, পানামা, পানামা, ইকুয়েডর, আজারবাইজান, ডেনমার্ক, মরক্কো, ইউক্রেন, সুদান, গায়ানা ও তাইওয়ানে ১ জন করে।